দার্জিলিং ভ্রমণ পয়েন্ট
- মিরিক ভ্রমণ: দার্জিলিং থেকে কাছেই অবস্থিত মিরিক শহরও একটি আকর্ষণীয় স্থান।
- গ্যাংটক ভ্রমণ: দার্জিলিং থেকে গ্যাংটক ভ্রমণ করাও অনেক পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।
- রেলওয়ে মিউজিয়াম: দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ইতিহাস জানার জন্য একটি মিউজিয়াম আছে।
- হস্তশিল্প কেনাকাটা: দার্জিলিংয়ের স্থানীয় হস্তশিল্প বাজার থেকে স্যুভেনির কিনতে পারেন।
- চা টেস্টিং: বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে চা টেস্টিং সেশনেও অংশ নিতে পারেন।
কম খরচে দার্জিলিং ভ্রমণ: সম্পূর্ণ গাইড
যারা কম বাজেটে দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে চান, তাদের জন্য দার্জিলিং একটি চমৎকার গন্তব্য। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো দার্জিলিংয়ে কীভাবে যাবেন, কোথায় ঘুরবেন, কী খাবেন, কোথায় শপিং করবেন, এবং কোথায় থাকবেন।
দার্জিলিং কেন যাবেন?
দার্জিলিং, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি পাহাড়ি শহর, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই শহর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। দার্জিলিংয়ে রয়েছে বিখ্যাত চা বাগান, টয় ট্রেন এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেলওয়ে স্টেশন ‘ঘুম’। এই শহরের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের জন্য এক অসাধারণ গন্তব্য।
কীভাবে যাবেন?
দার্জিলিং ভ্রমণের জন্য প্রথমে ইন্ডিয়ান ভিসা নিতে হবে। ফুলবাড়ি পোর্টের মাধ্যমে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধায় এসে ইমিগ্রেশন করে খুব সহজেই শিলিগুড়ি পৌঁছানো যায়। বাংলাবান্ধা থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব কম, তাই এই রুটটি বেছে নেওয়া উত্তম। এছাড়াও, লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারি সীমান্ত দিয়ে চেংড়াবান্ধা হয়ে শিলিগুড়ি যাওয়া যায়, তবে এটি তুলনামূলক বেশি সময়সাপেক্ষ।
ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে বাসে করে শিলিগুড়ি, এরপর দার্জিলিং পৌঁছানো সম্ভব। বাজেট ট্রিপের জন্য রেলপথ সবচেয়ে উপযুক্ত। বাই এয়ারে ঢাকা-কলকাতা-বাগডোগরা, শিলিগুড়ি রুটে আসতে হবে। তবে রেল বা সড়কপথে ভ্রমণ করলে খরচ অনেক কম হবে।
কোথায় কোথায় ঘুরবেন?
দার্জিলিংয়ে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা আপনার ভ্রমণকে আরো স্মরণীয় করে তুলবে:
- টাইগার হিল: টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্যোদয় দেখার সৌন্দর্য অবর্ণনীয়।
- বাতাসিয়া লুপ: এই জায়গা থেকে দার্জিলিংয়ের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
- হিমালয়ান জ্যু: এখানে তিব্বতি নেকড়ে, স্নো লিওপার্ড এবং রেড পান্ডা দেখা যায়।
- হ্যাপি ভ্যালি টি স্টেট: চা বাগানের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
- রক গার্ডেন: ঝর্ণা, হ্রদ এবং সাজানো বাগানের সৌন্দর্য অবিস্মরণীয়।
- মনেস্ট্রি ও প্যাগোডা: ঘুম মনেস্ট্রি এবং Japanese Temple & Peace Pagoda ঘুরে দেখার মতো জায়গা।
- মিরিক: দার্জিলিং থেকে কাছেই অবস্থিত মিরিক শহরও একটি আকর্ষণীয় স্থান।
- গ্যাংটক: দার্জিলিং থেকে গ্যাংটক ভ্রমণ করাও অনেক পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।
- রেলওয়ে মিউজিয়াম: দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ইতিহাস জানার জন্য একটি মিউজিয়াম আছে।
- হস্তশিল্প বাজার: স্থানীয় হস্তশিল্প বাজার থেকে স্যুভেনির কিনতে পারেন।
কী কী খাবেন?
দার্জিলিংয়ের ফুড মেন্যুতে রয়েছে বাঙালি, নেপালি, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ খাবারের বৈচিত্র্য। স্ট্রিট ফুড যেমন মোমো, পাকোড়া, চাওমিন, থুকপা এবং সেকুয়া (নেপালি কাবাব) অবশ্যই ট্রাই করবেন। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে নেপালি থালি, ভেজ থালি, পাওভাজি, ছোলা ভাটুরা পাবেন। ব্রেকফার্স্টে আলু পরোটা, লুচি-আলুর দম, ডাম্পলিং স্যুপও পাওয়া যায়। দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত চা অবশ্যই খেতে ভুলবেন না।
দার্জিলিংয়ে শপিং
শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মল রোড শপিংয়ের জন্য উপযুক্ত স্থান। এখানে নেপালি শাল, পেইন্টিংস, হ্যান্ডমেড শোপিচ, পুঁথির নেকপিস, হ্যাট, জ্যাকেট সবই পাওয়া যায়। কম বাজেটের শপিং করতে পারেন বাতাসিয়া লুপে। ফ্যান্সি জুয়েলারি, হোম ডেকর আইটেম, হাতে বানানো ব্যাগ এগুলো এখানে পাবেন। দার্জিলিং ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি প্যাকেট সব শপেই পাওয়া যায়। এছাড়াও দার্জিলিংয়ে বিগ বাজার (সুপার শপ) থেকে শপিং করতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
দার্জিলিংয়ে বিভিন্ন রেঞ্জের হোমস্টে, আবাসিক হোটেল, রেস্ট হাউজ আছে। মল রোডের আশেপাশে অনেক হোটেল পাওয়া যায়। দরদাম করে হোটেলে উঠতে পারেন। পিক সিজনে (এপ্রিল-জুন ও অক্টোবর-ডিসেম্বর) রুম রেন্ট একটু বেশি হতে পারে, তবে আগে থেকে বুকিং না করেও থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যা হবে না।
কিছু পরামর্শ
- পাহাড়ি রাস্তায় মোশন সিকনেস হতে পারে, তাই বমির মেডিসিন সাথে রাখবেন।
- সারাবছর ঠান্ডা থাকে, তাই শীত পোশাক সাথে নিয়ে যাবেন।
- বেসিক সেলফ কেয়ার অ্যাসেনশিয়ালস ক্যারি করবেন।
- দার্জিলিং খুবই পরিচ্ছন্ন শহর, তাই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
- বর্ষার সিজনে পাহাড়ি এলাকা ভ্রমণ না করাই ভালো।
- চা টেস্টিং: বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে চা টেস্টিং সেশনেও অংশ নিতে পারেন।
আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনার দার্জিলিং ভ্রমণকে সহজ করবে। প্ল্যান করে ফেলুন তাড়াতাড়ি এবং মুগ্ধতায় কাটুক আপনার ছুটির দিনগুলো! ভালো থাকবেন।