পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স কীভাবে সহজেই করবেন: বিস্তারিত গাইড

ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন
ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন

Table of Contents

ড্রাইভিং লাইসেন্সের গুরুত্ব

ড্রাইভিং লাইসেন্স শুধু আপনার গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় না, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র হিসাবেও কাজ করে। এছাড়া, এটি আপনার ড্রাইভিং দক্ষতার প্রমাণও দেয়, যা সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা

১৮ বছরের উপরে যে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারলেও, পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়স ২০ বছর বা তারও বেশি হতে হবে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া ভারী যানবাহন চালানো সম্ভব নয় এবং এমনকি সাধারণ হালকা যানবাহন চালানোর চাকরিতেও এই লাইসেন্স প্রয়োজন হতে পারে। তাই, পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স অনেকের জন্যই অপরিহার্য।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ধরন

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে:

  1. পেশাদার হালকা
  2. পেশাদার মধ্যম
  3. পেশাদার ভারী

এবার আমরা এই তিন ধরনের লাইসেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানব:

১) পেশাদার হালকা লাইসেন্স

এই লাইসেন্স ব্যবহার করে আপনি ২৫০০ কেজির কম ওজনের যানবাহন চালাতে পারবেন। পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ২০ বছর হতে হবে।

২) পেশাদার মধ্যম লাইসেন্স

এই লাইসেন্স দিয়ে আপনি ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি ওজনের যানবাহন চালাতে পারবেন। এই লাইসেন্স পেতে হলে আপনার বয়স ন্যূনতম ২৩ বছর হতে হবে এবং পেশাদার হালকা যানবাহন চালানোর ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

৩) পেশাদার ভারী লাইসেন্স

এই লাইসেন্সের মাধ্যমে আপনি ৬৫০০ কেজির বেশি ওজনের যানবাহন চালাতে পারবেন। পেশাদার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়স ন্যূনতম ২৬ বছর হতে হবে। এছাড়া, পেশাদার হালকা যানবাহন চালানোর ৩ বছরের ও পেশাদার মধ্যম যানবাহন চালানোর ৩ বছরের, মোট ৬ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

পেশাদার ড্রাইভিং স্কুল নির্বাচন

ড্রাইভিং স্কুল নির্বাচন করার সময় অবশ্যই লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও স্বীকৃত ড্রাইভিং স্কুল বেছে নিতে হবে। একটি ভালো ড্রাইভিং স্কুল আপনাকে সঠিক নিয়মে এবং নিরাপত্তা নির্দেশনা দিয়ে ড্রাইভিং শেখাবে, যা ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে সহায়ক হবে।

ড্রাইভিং পরীক্ষার প্রস্তুতি

ড্রাইভিং পরীক্ষার আগে ভালভাবে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। ড্রাইভিং স্কুলে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অনলাইনে বিভিন্ন রিসোর্স এবং ভিডিও দেখে ড্রাইভিং কৌশল শিখতে পারেন। তাছাড়া, রাস্তার চিহ্ন এবং নিয়ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন
ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির পদ্ধতি

সাধারণ স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির প্রক্রিয়ার মতোই পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির প্রক্রিয়া। অতিরিক্ত হিসেবে, এক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার খরচ

প্রায় প্রতিটি ধাপেই নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়। নিচে খরচের তালিকা দেওয়া হলো:

লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের খরচ

  • ক্যাটাগরি-১: এক ধরনের যানবাহনের জন্য প্রযোজ্য লাইসেন্স – ৫১৮ টাকা
  • ক্যাটাগরি-২: গাড়ি এবং মোটরসাইকেল উভয়ের জন্য – ৭৪৮ টাকা

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের খরচ

  • পেশাদার: ২,৪৮৭ টাকা (৫ বছরের নবায়ন ফিসহ)

ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং আবেদন ফি

ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য সাধারণ ক্যাটাগরির আবেদন ফি ২৫০০ টাকা। যদি কেউ এর চেয়ে বেশি দাবি করে, তবে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। ইমারজেন্সি লাইসেন্স প্রয়োজন হলে ৭ দিনের মধ্যে ৩৫০০ টাকা ফি দিয়ে লাইসেন্স পেতে পারেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক

আপনার লাইসেন্সের অবস্থা জানতে চাইলে মোবাইল থেকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানতে পারবেন। মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন DL DM (* এর স্থানে রেফারেন্স নাম্বার দিন) এবং পাঠিয়ে দিন 6969 নাম্বারে। ফিরতি ম্যাসেজে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের অবস্থা জানানো হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন

সাধারণত পেশাদার স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ৫ বছর এবং অপেশাদার স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ১০ বছর হয়ে থাকে। মেয়াদ শেষ হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করা আবশ্যক। ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়া নিচে দেওয়া হলো।

ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন
ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন

নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফরম
  • রেজিস্টার ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
  • নির্ধারিত ব্যাংকে ফি জমার রশিদ
  • পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পুলিশি ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • সদ্য তোলা এক কপি স্ট্যাম্প ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি

ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের খরচ

নবায়ন প্রক্রিয়া

ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

  1. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদের পুনরায় ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হবে। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদের জন্য এই ধাপ প্রযোজ্য নয়।
  2. ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফরম পূরণ করুন।
  3. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফরমের সাথে যুক্ত করুন।
  4. বিআরটিএ অফিসে ফরম ও কাগজপত্র জমা দিন।
  5. সবকিছু ঠিক থাকলে বায়োমেট্রিক তথ্যাদি প্রদান করুন। বিআরটিএ অফিসে ছবি, আঙুলের ছাপ ও স্বাক্ষর দিন। কিছুদিন অপেক্ষা করুন।
  6. স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত হলে এসএমএস পাবেন। এসএমএস আসলে বিআরটিএ অফিস থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:

  1. ড্রাইভিং লাইসেন্সের গুরুত্ব: ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা।
  2. পেশাদার ড্রাইভিং স্কুল: কোথায় এবং কীভাবে ভালো ড্রাইভিং স্কুল বেছে নেবেন।
  3. পরীক্ষার প্রস্তুতি: ড্রাইভিং পরীক্ষা কীভাবে নেয়া হয় এবং পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন।
  4. নিরাপত্তা বিধান: সড়ক নিরাপত্তা এবং সঠিকভাবে ড্রাইভিং শেখার গুরুত্ব।
  5. ড্রাইভিং লাইসেন্স হারালে করণীয়: ড্রাইভিং লাইসেন্স হারালে কীভাবে পুনরুদ্ধার করবেন।
  6. লাইসেন্সের বিভিন্ন ক্যাটাগরি: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাইসেন্সের ক্যাটাগরি এবং নিয়মের পার্থক্য।
  7. অনলাইন রিসোর্স: অনলাইন রিসোর্স বা অ্যাপ যেখানে আপনি ড্রাইভিং সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারেন।

শেষ কথা

ড্রাইভিং লাইসেন্স কেবল মোটরযান চালানোর অনুমতি নয়, এটি আপনার পরিচয়পত্র হিসেবেও কাজ করে। সঠিকভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স অর্জন করা একজন চালকের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমায়। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স করা প্রতিটি চালকের জন্য জরুরি।

Leave a Comment