বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্ববৃহৎ পর্যটন স্থান কক্সবাজার । এই সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম দেশী বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে সারা বছর এখানে। বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, সারি বেধে থাকা ঝাউবন, ভোরে সমুদ্র ফুঁড়ে যে সূর্যের উদয় হয়, সন্ধ্যায় আবার ঢেউয়ের মাঝে বিলীন হয তা। প্রকৃতির এই মোহনীয় রূপ আপনাকে মায়ার জালে আবদ্ধ করে ফেলবে।
ফ্যামিলি বা বন্ধু বান্ধব সহ কোনো ট্রিপের কথা বললে প্রথমেই মাথায় আসে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এর নাম । নানান কারণে অনেকের কক্সবাজার ট্যুর শতভাগ ভালো হয়না সুন্দর একটি গাইডলাইনের কারণে । আশা করি এই ব্লগ আপনার কক্সবাজার ভ্রমণ আরো প্রাণবন্ত ও সহজ করতে সাহায্য করবে।
কক্সবাজার ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়:
এখানে বছরজুড়ে ভ্রমণপ্রেমীরা ছুটে আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে ঢেউয়ের গর্জন শুনতে ও দেখতে । শীতেই বেশি পর্যটকমুখর থাকে কক্সবাজার কারণ শীতকালে সবাই বেড়াতে পছন্দ করে । কিন্তু সমুদ্র এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি সারা বছরই যেতে পারেন। সমুদ্র তার রূপ বদলায় প্রায় প্রতিটা মৌসুমে । ঝুম বৃষ্টির কোন এক সন্ধ্যায় বৃষ্টিশেষে আপনি বিচে গেলে যে স্নিগ্ধ অনুভূতি পাবেন, ঠিক তেমনি শীতের রাতে সৈকতে হাঁটতে আপনার ভালো লাগবে, কোন কিছুর সাথে তার তুলনা হবেনা।
আবার হেমন্তের হেমন্তের কোনো জোছনা রাতে বিচে বসে সমুদ্রের যে রূপ লাবন্য দেখতে পাবেন, সেটা আপনার জীবনের সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে অনেককাল। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখা ভালো নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কক্সবাজার ভ্রমণে আপনার যে পরিমাণ খরচ হবে, তার থেকে ৩০ ভাগ খরচ কম লাগবে বছরের অন্য সময় গেলে ।
যাওয়ার উপায় কি কি:
ঢাকা থেকে কক্সবাজার আকাশ পথে, সড়ক পথে এবং রেল পথে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজার গামী যে সকল বাসগুলো তারমধ্যে হানিফ এন্টার প্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য রয়েছে। বাসগুলোর প্রতি সীটের ভাড়া শ্রেণী ভেদে ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
আপনি যদি ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চান তাহলে কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, সোনার বাংলা, চট্টগ্রাম মেইলে করে যেতে করতে পারেবেন । এরপর চট্টগ্রামের দামপাড়া বাস্ট স্ট্যান্ড অথবা নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিকসহ বিভিন্ন ধরণ ও মানের বাস পাবেন। বাস ভেদে ভাড়া ২৮০ থেকে ৫৫০ টাকা হয়ে থাকে ।
এছাড়া সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে বেশ কিছু ইয়ারলাইন্স যেমনঃ বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা সহ বেশকিছু বিমান রয়েছে । এছাড়া আকাশপথে চট্টগ্রাম এসে সড়ক পথে উপরে উল্লেখিত উপায়ে কক্সবাজার যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন ও ভাড়া কেমন:
কক্সবাজারে রয়েছে বিভিন্ন মানের প্রায় ৫০০র বেশি হোটেল-মোটেল যা ফাইভ স্টার হোটেল থেকে শুরু করে সস্তার বের্ডিং পর্যন্ত । এসব হোটেলের সর্বমোট ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১.৭৫ থেকে ২ লাখ জন পর্যন্ত । এসব হোটেলের মধ্যে ভালো মানের হোটেল গুলোর ধারণ ক্ষমতা আনুমানিক ৫০ হাজার মত । তাই অফ সিজনে বুকিং না দিয়ে গেলেও সমস্যা নেই, কিন্তু সিজনে রুম বুকিং না করে কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়া ঠিক না, যদি চলেও যান তা হয়ে উঠে বেশ কষ্টদায়ক । হোটেল-মোটেল গুলোকে সাধারণত তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায় যথাঃ প্রিমিয়াম, এক্সিকিউটিভ ও স্ট্যান্ডার্ড (তবে একদম সস্তার হোটেলগুলো বাদ দিয়ে) ।
প্রিমিয়াম ক্যাটারির হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশান প্যারাডাইস, লং বিচ বিচ রিসোর্ট, সি-গাল, সি প্যালেস, রয়্যাল টিউলিপ, হেরিটেজ, কক্স টুডে ইত্যাদি। এগুলোর রুম ভাড়া পড়বে ৬০০০ থেকে ১২০০০ হাজার টাকার মধ্যে।
এক্সিকিউটিভ ক্যাটাগরির রিসোর্ট এর মধ্যে রয়েছে হোটেল সি ক্রাউন, কোরাল রিফ, আইল্যান্ডিয়া, ইউনি রিসোর্ট, নিটোল রিসোর্ট, বিচ ভিউ রিসোর্ট সহ ইত্যাদি। এগুলোর রুম প্রতি ভাড়া পড়বে (সময়ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে) ৩০০০ থেকে ৬০০০ টাকার মধ্যে।
প্রচুর রিসোর্ট রয়েছে কক্সবাজারে স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটাগরির । এর মধ্যে রয়েছে হানিমুন রিসোর্ট, ইকরা বিচ রিসোর্ট, সি ওয়ার্ল্ড, সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, হোয়াইট বিচ রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট সহ অনেক গুলো । এগুলোর রুম প্রতি ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে।
কক্সবাজারে কোথায় খাবেন:
কক্সবাজারে খাবার সংক্রান্তে আপনি অনেক ভুল করতে পারেন। কারণ বাসা থেকে দুর্বল মদ্ধতে কক্সবাজারে খাবার খাওয়ার বেশি সময় দেয়া হয়। এবং প্রায় সবগুলো হোটেলে খাওয়ার অপশন আছে। যেমন আপনি যদি কোনো প্রাইভেট হোটেলে থাকেন তাহলে অবশ্যই সেখানে খাবার আছে। এবং আমরা আপনাকে বলবো যে, কক্সবাজারে খাবার সংক্রান্তে আপনি কখনো ঘরের পরিবেশে থাকেন না। আপনি এখানে খাওয়ার বেশি সময় পাবেন রেস্তোরেন্ট এর মধ্যে।
কক্সবাজারে খাওয়ার অপশন:
আমরা আপনাকে সবচেয়ে প্রিয় কিছু খাবার লিস্ট দিবো যা আপনি আপনার মন মতো পেয়ে যাবেন এবং খুব মজা পাবেন।
সবচেয়ে বিখ্যাত খাবারগুলো কক্সবাজারের:
- মচ্ছ ভর্তা
- পুঁটি মাছের পোড়া
- কাঁচা মরিচের চিংড়ি
- পোস্তো ভর্তা
- কাঁচা কলা ভর্তা
- চিংড়ি মাছের মালাইকারি
- দুধ হিসেবে প্রচুর মাত্রায় নিয়ে পুঁটি মাছের মালাইকারি বানানো হয়।
- কক্সবাজারের বাইরে এমন কোন প্রান্তে যাওয়া হলে অবশ্যই চিংড়ি বেঁচে পেতে দেখতে হবে।
এছাড়াও কক্সবাজারের অন্যান্য খাবারগুলো হলো:
- পোষ্ট বড়া
- চিংড়ি বিরিয়ানি
- চিংড়ি পিজ্জা
- বড়ি পিলাফ
- চিংড়ি পিলাফ
- চিংড়ি রোল
- চিংড়ি পোড়া
- চিংড়ি পাকোড়া
- চিংড়ি পিঠা
- চিংড়ি নান
- চিংড়ি পাটিসুপ
- চিংড়ি বড়া
- চিংড়ি রুটি
- চিংড়ি কাবাব
- চিংড়ি স্যান্ডউইচ
- চিংড়ি পোরটা
- চিংড়ি রোল পিলাফ
- চিংড়ি নান
- চিংড়ি রুটি
- চিংড়ি সুপ
এতে আর যে কোন খাবারের রস পেয়ে থাকার নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। এখনি সময় নেওয়া যাক আর কক্সবাজারে খাওয়ার আসন্ন প্রান্ত এবং চিংড়ি সংক্রান্তে আপনি অনেক কিছু জেনে নিন।
কোথায় কোথায় ভ্রমণ করবেন:
আপনি যদি কক্সবাজারে ভ্রমণে আসেন, তাহলে অবশ্যই নিচের জায়গাগুলি ভ্রমণ করতে হবে:
- কক্সবাজার বিচ: এটা হলো সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় সৈকত স্থল। আপনি এখানে অনেক খুবই মজা পাবেন। আপনি এখানে যেসব সুন্দর বাচ্চা, বৃদ্ধ, যুবক দেখতে পাবেন, এখানে যত জানালা দেখতে পাবেন, তাতে অবশ্যই আপনার আগ্রহ বাড়বে এবং আপনি এখানে পূর্ণ সুখ পাবেন।
- ইনানি বিচ: এটা হলো সেই সময় যখন আপনি মাঝে মাঝে মনে পায়নি। তাহলে আপনি অবশ্যই ইনানি বিচে গেলে ভ্রমণ করতে পারবেন। ইনানি বিচে যে কোনো সময় এসে থাকতে পারেন এবং অবশ্যই আপনি এখানে ব্যাপার বলে দেখতে পাবেন।
- সবুজ দ্বীপ পর্যটন কেন্দ্র: এটা হলো সবুজ দ্বীপের একটা পর্যটন কেন্দ্র এবং আপনি এখানে গিয়ে অবশ্যই নিচের অংশগুলো ভ্রমণ করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি অবশ্যই ভ্রমণ করতে পারবেন চিংগরিয়া আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, কক্সবাজার মুজিবনগর মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, ইস্কান্দার মহল ও ফোস্কা, কক্সবাজার মুজিবনগর মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, বগবা বিমান বন্দর কেবল গেট, প্রান্তিক চার্জার মুজিবনগর বন্দর ও নৌ পাহাড়।
কক্সবাজারে ভ্রমণে করণীয়:
সমুদ্র সান্ত্বনা এনে দেয়। মনে মনে সমুদ্র দেখলে মন খুলে যায়, মনের দুয়ারও মুক্ত হয়ে সমুদ্রের মত সহজে পালক বিচ্ছিন্ন হয়। সকাল বিকাল সন্ধ্যায় সমুদ্র পারে ঘুরে আসা, এর গল্প শোনা, অথবা নির্জনে বসে ঢেউ শোনা, এমনকি একেবারে হেঁটে বেড়ানো, সারি বাঁধে থাকা ঝাউবনে সময় কাটানো – সমুদ্র সাথে সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সমুদ্রে নামার আগে জোয়ার ভাটার সময় ঠিক করে নেবেন। সমুদ্রে নামবেন না ভাটার সময়।
যদি আপনি বৃষ্টির দিনে কক্সবাজারে যান, তবে বৃষ্টির পরের সময় বিচে যাবেন। এসময় একটা শান্ত অনুভূতি অনুভব করা যাবে। রাতে নীরবতায় সমুদ্রের গর্জন আপনার চিত্ত শান্ত করবে। ঢেউয়ের গর্জন, মৃদু বাতাসের সাথে পর্যায়ের রোমাঞ্চ আপনাকে মোহিত করবে।
কক্সবাজারের অন্যত্রেও দর্শনীয় স্থান অতএব হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী বিচ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রামু বৌদ্ধ বিহার এবং সেন্টমার্টিন। এগুলোতে সময় নিয়ে আসা যেতে পারে। এই ভ্রমণের আনন্দময় ক্ষণগুলোর ছবি তুলে স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য সবাই কামনা করেন। আর যদি চান, তাহলে বিচে ফটোগ্রাফারের সাথে যোগাযোগ করে ছবি তুলতে পারবেন। এছাড়াও, স্পীডবোট রাইড, প্যারাগ্লাইডিং এবং অন্যান্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় কার্যক্রম কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হয়।
কক্সবাজার ভ্রমণের টিপস এবং সতর্কতা:
- সমুদ্রে নামার সময়ে জোয়ার ভাটার সময় ঠিক করে নেবেন। ভাটার সময় সমুদ্রে নামবেন না।
- কোনও খাবার নেওয়ার আগে দামের সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানতে ভুলবেন না।
- রিক্সা বা অটোরিকশা ধরার আগে খুব ভালোভাবে দাম নিবেন।
- অফসিজনে যাওয়ার সময়ে হোটেলের দাম কম হবে। পাহাড়ি সরকারি ছুটির সময়ে কক্সবাজারে যেতে উত্তেজিত হোক না, কারণ তখন খুব ভীড় থাকে এবং সমুদ্রের আনন্দ উপভোগ করা কঠিন হতে পারে। পার্কিং খরচও বেশি হবে।
- ইনানী যাওয়ার সময়ে খালি পায়ে হাঁটা উচিত না, কারণ প্রবাল অনেক ধারালো হয়ে আছে।
- বিচে অপচনশীল বা অপ্রয়োজনীয় কিছু ফেলবেন না। এটা আপনার ব্যক্তিত্বের একটি অংশ হয়।
- যেকোনো সাহায্যের জন্য পর্যটক পুলিশের সাহায্য নিন।