আপনি যদি ২০২৪ সালে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম জানার জন্য অনুসন্ধান করে থাকেন, তবে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আমাদের ব্লগে আমরা ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করি। আজকের আলোচনার বিষয় হলো বাংলাদেশে কিভাবে ট্রেড লাইসেন্স নিবন্ধন করা যায়।
সর্বশেষ আপডেট ও সহযোগিতার জন্য WhatsApp যোগ দিন
WhatsApp Channel | Join WhatsApp |
Facebook Page | Follow on Facebook |
ট্রেড লাইসেন্সের কাজ কী:
ট্রেড লাইসেন্স হলো সরকারের অনুমতিপত্র যা ব্যবসাকে বৈধতা দেয়। ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর এলাকায় ব্যবসা শুরু করতে হলে স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে এই অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয়।
ট্রেড লাইসেন্সের গুরুত্ব কতটুকু:
- বৈধতা: ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে বৈধ করে।
- বিশ্বাসযোগ্যতা: ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতি গ্রাহকের বিশ্বাস বৃদ্ধি করে।
- আইনগত সুবিধা: ট্রেড লাইসেন্স থাকা ব্যবসায়ের আইনি সুবিধা বেশি।
যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স করতে:
- মালিকের তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন হয় একমালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে (অংশীদারি ব্যবসায়ে প্রত্যেক অংশীদারের আলাদা আলাদা তিন কপি করে)
- মালিকের বা অংশীদারদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- ইউটিলিটি বিলের একটি কপি
- জমি/দোকানের মালিকের সাথে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের ফটোকপি লাগবে ভাড়া জমি বা দোকানে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে
ট্রেড লাইসেন্স ফি এর তালিকা দেওয়া হলো:
বাংলাদেশে প্রায় ২৯৪ ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। ব্যবসায়ের ধরন অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের ফি ভিন্ন হয়। সাধারণত এই ফি ৩০০ টাকা থেকে ১২,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- লিমিটেড কোম্পানির ফি: ১৫০০-১২০০০ টাকা
- আর্থিক প্রতিষ্ঠানের, ব্যাংক এবং বীমা ফি লাগবে: ৩০০০-১০০০০ টাকা
- ট্রেনিং বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি: ৫০০-৫০০০ টাকা
- ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ফি: ১০০০-৬০০০ টাকা
- লিমিটেড ব্যতিত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ফি: ৩০০০-৫০০০ টাকা
- অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ফি: ৫০০-৪০০০ টাকা
ট্রেড লাইসেন্স করার ধাপসমূহ:
ধাপ-১: আবেদন ফরম সংগ্রহ
ট্রেড লাইসেন্স করার প্রথম ধাপ হলো নির্ধারিত অফিস থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করা। আপনার ব্যবসা যদি ইউনিয়ন পর্যায়ে থাকে তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এবং শহর বা পৌর এলাকায় হলে পৌরসভা থেকে ফরম সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া অনলাইন থেকেও ফরম প্রিন্ট করা যায়।
ধাপ-২: আবেদন ফরম পূরণ
সংগৃহীত আবেদন ফরমটি যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। উপরে উল্লিখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে কাগজপত্র সত্যায়িত করা লাগতে পারে।
ধাপ-৩: আবেদন ফরম জমা দেওয়া
সঠিকভাবে ফরম পূরণ ও কাগজপত্র সংযুক্ত করে নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে তার রশিদসহ আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
ধাপ-৪: কাগজপত্র ও ব্যবসায়ের বৈধতা যাচাই
আপনার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখবে সংশ্লিষ্ট অফিস। এরপর একজন কর্মকর্তা আপনার ব্যবসায়িক স্থল পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শনে সন্তুষ্ট হলে তার প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
ধাপ-৫: ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু
কর্মকর্তার প্রতিবেদন সঠিক হলে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হবে এবং আপনাকে তা জানানো হবে।
ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার প্রক্রিয়া:
প্রথমবার ইস্যু করার পর ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ থাকে ১ বছর। মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ব্যবসা পরিচালনা করতে চাইলে নবায়ন করতে হবে। নবায়নের জন্য মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে যত দ্রুত সম্ভব নবায়ন করা উত্তম।
ই-ট্রেড লাইসেন্স অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া:
বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য অনলাইনে https://prottoyon.gov.bd/ Or https://www.etradelicense.gov.bd/URegistration ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করা যায়। এটি করতে হলে e-Trade License ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম, মোবাইল নাম্বার ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে একাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে। এরপর ই-ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা দেওয়া যায়।
অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার প্রক্রিয়া:
ব্যবসা স্থগিত রাখতে চাইলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা যেতে পারে। একমালিকানা ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করতে হলে মেয়াদ শেষে নবায়ন না করলেই বাতিল হয়ে যাবে। তবে যে অফিস থেকে এটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল সেখানে আবেদন করে বাতিল করা উত্তম।
অংশীদারি ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করতে হলে প্রথমে কোর্ট থেকে ব্যবসায়ের অবসায়নের অনুমতি নিতে হবে। এরপর স্থানীয় সরকারের ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুকারী বিভাগের নিকট আবেদন জমা দিতে হবে।
এই ধাপে ধাপে নির্দেশনা মেনে আপনি সহজেই আপনার ট্রেড লাইসেন্স আবেদন, নবায়ন বা বাতিল করতে পারবেন। আশা করি এই প্রক্রিয়াগুলো আপনাকে সাহায্য করবে আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে।
ট্রেড লাইসেন্স অতিরিক্ত পয়েন্ট:
- ট্রেড লাইসেন্সের গুরুত্ব:
- কেন ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন
- লাইসেন্স না থাকার ফলাফল
- ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে কিভাবে
- ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময়সীমা ও জরিমানা:
- নবায়নের সঠিক প্রক্রিয়া
- নির্ধারিত সময়ের পর জরিমানা কতটুকু হতে পারে
- জরিমানা এড়াতে করণীয়
- অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করার সুবিধা:
- ঘরে বসে আবেদন করার সুবিধা
- সময় ও অর্থের সাশ্রয়
- অনলাইন সিস্টেমের নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা
- ট্রেড লাইসেন্সের ধরন:
- বিভিন্ন ধরনের ট্রেড লাইসেন্স (ব্যবসায়, সেবা, উৎপাদন, ইত্যাদি)
- কোন ব্যবসায়ের জন্য কোন লাইসেন্স প্রযোজ্য
- অফলাইন বনাম অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়া:
- অফলাইন প্রক্রিয়ার ঝামেলা
- অনলাইনে আবেদন করার সুবিধা ও সরলতা
ট্রেড লাইসেন্স FAQ: সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: ট্রেড লাইসেন্স কী এবং এটি কেন প্রয়োজন?
উত্তর: ট্রেড লাইসেন্স হলো একটি সরকারি অনুমতিপত্র যা ব্যবসাকে বৈধতা দেয়। এটি ব্যবসার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে এবং আইনি সুবিধা প্রদান করে। ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হয় এবং জরিমানার মুখে পড়তে হয়।
প্রশ্ন: ট্রেড লাইসেন্সের জন্য কোন কোন কাগজপত্র প্রয়োজন?
উত্তর: ট্রেড লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে মালিকের তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ইউটিলিটি বিলের একটি কপি, এবং ভাড়া জমি বা দোকানের ক্ষেত্রে মালিকের সাথে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের ফটোকপি।
প্রশ্ন: ট্রেড লাইসেন্সের ফি কত হতে পারে?
উত্তর: ট্রেড লাইসেন্সের ফি ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত এই ফি ৩০০ টাকা থেকে ১২,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যেমন লিমিটেড কোম্পানির ফি ১৫০০-১২০০০ টাকা এবং ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ফি ৩০০০-১০০০০ টাকা।
প্রশ্ন: ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন কিভাবে করা যায়?
উত্তর: ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে পুরনো লাইসেন্সটি সাথে নিয়ে নবায়ন ফি জমা দিতে হবে। নবায়নের সময়সীমা সাধারণত ১ বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
প্রশ্ন: অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করার পদ্ধতি কী?
উত্তর: অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করতে হলে e-Trade License ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম, মোবাইল নাম্বার ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে একটি একাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে। এরপর ই-ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা দেওয়া যায়।
প্রশ্ন: ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার নিয়ম কী?
উত্তর: একমালিকানা ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করতে হলে মেয়াদ শেষে নবায়ন না করলেই বাতিল হয়ে যাবে। অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কোর্ট থেকে অবসায়নের অনুমতি নিয়ে এবং স্থানীয় সরকারের ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুকারী বিভাগের নিকট আবেদন জমা দিয়ে বাতিল করতে হয়।