দলিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি নথি সম্পত্তি বা জমি-জমা লেনদেনের ক্ষেত্রে অবশ্যক। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় দলিলে অনেক ভুল তথ্য লেখা থাকে বা অকাঙ্কিত ভুল হয়ে যায় । ভবিষ্যতে এই ভুল তথ্য অনেক বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় । তাই দলিলে ভুল তথ্য আছে এমন বুঝতে পারলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যদি কোন স্থাবর সম্পত্তির দলিল ভুল তথ্যসহ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয় তবে তা সংশোধন করা যায় । সংশোধনী ক্ষেত্রে আসল বিষয় মাইনর বা মেজর সেটি বিবেচ্য করা।
জমির দলিলে ভ্রম বা ভুল:
কোন পরিবর্তন ঘটবে না পুরিপুরি মিল থাকবে দলিলের মূল কাঠামো বা স্বত্বের সাথে, সেরূপ ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার/সাব-রেজিস্ট্রার বরাবরে আবেদন করা যাবে। সাধারণত এই ধরনের ছোট-খাটো ভুল সাব-রেজিস্ট্রার সংশোধন করতে পারেন । এই ধরনের সংশোধনকে ভ্রম বা ভুল সংশোধনী দলিল বলা হয়।
কী কী সমস্যা হতে পারে জমির দলিলে ভুল তথ্য থাকলে:
- আর্থিক ক্ষতি সম্মুখীন হয়: সম্পত্তির মূল্য হ্রাস পেতে পারে ভুল তথ্যের কারণে, এবং আর্থিক লেনদেনে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
- সম্পত্তি হস্তান্তরের সম্মুখীন হয়: সম্পত্তির হস্তান্তর প্রক্রিয়া জটিল হতে যেতে পারে ভুল তথ্যের কারণে ।
- আইনি জটিলতা সম্মুখীন হয়: সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে ভুল তথ্যের কারণে, যা আইনি জটিলতার দিকে ধাবিত করতে পারে।
দলিলে ভুল তথ্যের প্রকারভেদ:
দলিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি নথি যা জমি, বাড়ি, বা অন্য সম্পত্তির লেনদেনের ক্ষেত্রে আবশ্যক। প্রতিটা দলিলে সম্পত্তির সঠিক বিবরণ থাকা আবশ্যক, যাতে ভবিষ্যতে কোন ধরনের জটিলতা তৈরি না হয় । কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় দলিলে ভুল তথ্য থাকে, যা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
- নামের বানান ভুল হলে: নামের বানান দলিলে ভুল থাকলে আইনি জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভবনা হতে পারে।
- জমির পরিমাণ ভুল হলে: সঠিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে জমির পরিমাণে ভুল থাকলে ।
- চৌহদ্দি ভুল হলে: জমির চৌহদ্দি খুবই গুরত্বপূর্ন, যা জমির অবস্থান নির্ধারণ করতে সমস্যা দেখা দেয় চৌহদ্দিতে ভুল থাকলে ।
- অন্যান্য তথ্য ভুল হলে: অন্যান্য তথ্যের ভুলের মধ্যে মৌজা, খতিয়ান, দাগ নম্বর, দলিলের তারিখ, মালিকানার ধরন ইত্যাদি তথ্য ভুল থাকতে পারে।
জমির দলিলে ভুল তথ্য থাকলে আপনার করণীয় কী:
ভুল তথ্য শনাক্ত করার পর দ্রুত সংশোধন করা জরুরি। তাছাড়া বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
১. দলিলের ভুল তথ্য শনাক্তকরণ:
প্রথমে দলিলের ভুল তথ্য গুলো শনাক্ত করা লাগবে। তারপর সম্পত্তির মালিকানার নথি, মৌজা, দাগ নম্বর, খতিয়ান ও চৌহদ্দি ইত্যাদির সাথে দলিলের তথ্যগুলি মিলিয়ে দেখতে হবে সমস্যা আছে কি না ।
২. ভুল তথ্য সংশোধন: ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য দুটি উপায় রয়েছে:
২.১. আদালতের মাধ্যমে:
- বেশি সময় হলে ৩ বছরের অধিক: আপনার যদি দলিল রেজিস্ট্রির সময় ৩ বছরের বেশি পার হয়ে যায় এবং ভুল তথ্য সংশোধন করার প্রয়োজন মনে হয়, তাহলে মামলা দায়ের করে ভুল তথ্য সংশোধন করতে হবে দেওয়ানি আদালতে ।
২.২. প্রশাসনিক পদ্ধতি:
- ছোট ধরনের ভুল: আপনার ভুল তথ্যগুলি যদি ছোট ধরনের হয়ে থাকে, যেমন: নামের বানান ভুল বা এই ধরনের , তাহলে ভুল সংশোধন করা যায় রেজিস্ট্রার/সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আবেদন করে ।
- বড় ধরনের ভুল: যদি ভুল তথ্যগুলি বড় ধরনের হয়, যেমন: দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর, পরিমাণ ভুল হয় তাহলে রেজিস্ট্রার/সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আবেদন করে ভ্রম বা ভুল সংশোধনী দলিল তৈরি করতে হবে ।
দলিল সংশোধন করার জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন:
- দলিলের মূল কপি ভুল তথ্য সম্বলিত;
- আবেদন ফি প্রদান;
- ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদনপত্র;
- ভুল তথ্য প্রমাণের কাগজপত্র;
- আবেদনকারীর সনাক্তকরণ পত্র;
দলিল সংশোধনের ফি কত বা ভ্রম সংশোধন দলিলের রেজিস্ট্রি খরচ:
- রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হবে মাত্র ১০০ টাকা;
- স্ট্যাম্প শুল্ক লাগবে মাত্র ৩০০ টাকা।
- স্টাম্পে হলফনামা মাত্র ২০০ টাকার ।
- আপনি স্ট্যাম্প শুল্ক মওকুফ আবেদন করতে পারেন, স্ট্যাম্প আইন ১৮৯৯ এর ১৬ ধারা মোতাবেক ২০ টাকার কোর্ট ফি প্রদান করে আবেদন করতে হবে।
- এন: ফি লাগবে । বাংলায় প্রতি ৩০০টি শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা তার অংশ বিশেষের জন্য ১৬ টাকা লাগবে এবং আর ইংরেজি ভাষা হলে এক পৃষ্ঠা বা তার অংশ বিশেষের জন্য ২৪ টাকা।
FAQ:
দলিলে ভুল তথ্য থাকলে কীভাবে সংশোধন করা যায়?
উত্তর: ভুল তথ্য দলিলের সংশোধনের দুটি প্রধান উপায়:
- সাব-রেজিস্ট্রারের/রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে: সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার /সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করা যায় ছোটো ভুলের সংশোধন করার জন্য।
- আদালতের মাধ্যমে: বড়ো ধরনের ভুল (দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর) সংশোধন করার জন্য দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করতে হয়।
দলিলে ভুল তথ্য সংশোধন করতে কত সময় লাগে?
উত্তর: ভুলের ধরনের উপর নির্ভর করে ভুল সংশোধন করতে কত সময় লাগবে, সংশোধনের প্রক্রিয়া, এবং আইনি জটিলতার উপর। সাধারনত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে ছোটো খাটো ভুল সংশোধন করতে । কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বড়ো ধরনের ভুল সংশোধন করতে তবে এটার ক্ষেত্রে নিয়মিত ফাইলের খোঁজ নেওয়া লাগবে ।