অনলাইনে সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করার নিয়ম ও ফি

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
ড্রাইভিং (লাইসেন্স ) করার নিয়ম

Table of Contents

সহজে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম

আজকের লেখাটি তাদের জন্য যারা ড্রাইভিং লাইসেন্স সহজে এবং নির্ভুলভাবে করতে চান। দৈনন্দিন জীবনে গাড়ি বা মোটরযান ব্যবহারের গুরুত্ব অসীম। চালক হিসেবে গাড়ি চালাতে হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স অপরিহার্য। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন এবং শর্ত পালন করতে হয়। আসুন জেনে নিই ড্রাইভিং লাইসেন্স কীভাবে করা যায়।

ড্রাইভিং লাইসেন্স কি এবং কেন প্রয়োজন?

ড্রাইভিং লাইসেন্স একজন চালকের যোগ্যতার সনদ। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো বেআইনি। ট্রাফিক পুলিশ যে কোনো সময় আপনার লাইসেন্স চেক করতে পারে। এছাড়াও এটি একটি পরিচয়পত্র হিসেবে কাজ করে, ব্যাংক একাউন্ট খোলা, বিদেশ ভ্রমণ, বা অন্যান্য পরিচয় নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আপনার পরিচয় জানার জন্যও এটি প্রয়োজন হতে পারে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত

১. লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্স: ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রথমে লার্নার লাইসেন্স নিতে হবে।

২. শিক্ষাগত যোগ্যতা: ন্যূনতম ৮ম শ্রেণী পাশ হতে হবে।

  1. বয়স: সাধারণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে।
  2. সুস্থতা: শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রকারভেদ

ড্রাইভিং লাইসেন্সের কিছু প্রকারভেদ রয়েছে:

  1. লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স
  2. স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স
  3. আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স

প্রত্যেক ধরনের লাইসেন্সের জন্য আলাদা শর্তাবলী রয়েছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি:
  • ১ ক্যাটাগরি: ৫১৮ টাকা
  • ২ ক্যাটাগরি: ৭৪৮ টাকা
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি:
  • পেশাদার: ২,৪৮৭ টাকা (৫ বছরের নবায়ন ফিসহ)
  • অপেশাদার: ৪,২১২ টাকা (১০ বছরের নবায়ন ফিসহ)
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি:
  • পেশাদার: ১৫ দিনের মধ্যে ২,৪৮৭ টাকা
  • অপেশাদার: ১৫ দিনের মধ্যে ৪,২১২ টাকা

১৫ দিন পার হলে প্রতি বছরের জন্য ৫১৮ টাকা জরিমানা প্রদান করতে হবে।

লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রথম ধাপ হলো লার্নার লাইসেন্স। এটি প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। লার্নার লাইসেন্সের মেয়াদ ৩ মাস। এই সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  1. লার্নার লাইসেন্স ফরম
  2. ৩ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ও ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  3. রেজিস্টার ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট
  4. পরিচয়পত্র/এনআইডি কার্ড অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি
  5. বিদ্যুত বিল বা অন্য কোনো ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি
  6. নির্ধারিত ফি পরিশোধের রশিদ


লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স পদ্ধতি

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। এটি পেতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া:

  1. ফরম সংগ্রহ ও পূরণ:
  • বিআরটিএ (BRTA) থেকে ফরম সংগ্রহ করুন অথবা তাদের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করুন। প্রথম পৃষ্ঠাটি নিজের তথ্য দিয়ে পূরণ করুন।
  1. মেডিকেল সার্টিফিকেট:
  • ফরমের দ্বিতীয় পৃষ্ঠাটি একজন রেজিস্টারকৃত ডাক্তার দ্বারা পূরণ ও স্বাক্ষর করান।
  1. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্তি:
  • নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দেয়া ফি-এর রশিদ
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের ফটোকপি
  • সাম্প্রতিক ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি
  1. ফরম জমা:
  • সবকিছু ঠিকমতো পূরণ করার পর ফরমটি বিআরটিএ অফিসে জমা দিন।
  1. লার্নার লাইসেন্স সংগ্রহ:
  • ফরম যাচাই করার পর, আপনাকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দেয়া হবে যখন আপনি লার্নার লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন। সাধারণত, এটি জমা দেয়ার ১/২ দিনের মধ্যেই দেয়া হয়ে থাকে। নির্ধারিত তারিখে বিআরটিএ অফিসে উপস্থিত হয়ে রিসিপশন বুথ থেকে লার্নার লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
  1. স্বাক্ষর:
  • ফরম এবং লার্নার লাইসেন্সটি একটি বিআরটিএ কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করান।
  1. লার্নার লাইসেন্স ব্যবহার:
  • স্বাক্ষরিত ফরমটি আবার রিসিপশন বুথে জমা দিন এবং লার্নার লাইসেন্সটি নিয়ে যান। এই লাইসেন্স ব্যবহার করে আপনি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন এবং পরবর্তীতে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নোট: লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ৩ মাস। এই সময়সীমার পরে এটি ব্যবহার করা যাবে না।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পদ্ধতি

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর, আপনি স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন, যা আপনাকে আইনগতভাবে পেশাদার বা অপেশাদারভাবে মোটরযান চালানোর অনুমতি দেবে।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স
ড্রাইভিং (লাইসেন্স ) করার নিয়ম

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

ড্রাইভিং স্মার্টকার্ড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন:

  • স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফরম
  • রেজিস্টারকৃত ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি
  • নির্ধারিত ফি-এর রশিদ
  • পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন
  • সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মূল কপি ও ফটোকপি

ড্রাইভিং পরীক্ষা

ড্রাইভিং পরীক্ষা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়: লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক।

  1. লিখিত পরীক্ষা:
  • ড্রাইভিং এবং গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত প্রশ্ন, উত্তরের জন্য ২৫-৩০ মিনিট সময়, পাশ করার জন্য নূন্যতম ৬৬% নম্বর প্রয়োজন।
  1. মৌখিক পরীক্ষা:
  • রাস্তার বিভিন্ন চিহ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা।
  1. ব্যবহারিক পরীক্ষা:
  • অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানোর দক্ষতা প্রদর্শন, পার্কিং, জিগজ্যাগ ড্রাইভিং ইত্যাদি।
ড্রাইভিং পরীক্ষার নমুনা প্রশ্নোত্তর
ড্রাইভিং পরীক্ষার নমুনা প্রশ্নোত্তর

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স করার ধাপসমূহ

  1. ফরম পূরণ:
  • নির্ধারিত ফরমটি পূরণ করুন। ফরম পূরণের সময় সকল ইংরেজি অক্ষর বড় হাতের অক্ষরে লিখুন।
  1. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্তি:
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফরমের সাথে যুক্ত করুন।
  1. ফরম জমা:
  • পরীক্ষায় পাশের ফলাফল পেলে কাগজপত্রসহ ফরমটি বিআরটিএ অফিসে জমা দিন।
  1. প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ:
  • ফরম জমা দিলে প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ পাবেন, যেখানে বায়োমেট্রিক তথ্যাদি নেয়ার তারিখ দেয়া থাকবে।
  1. বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান:
  • নির্ধারিত তারিখে প্রাপ্তি স্বীকার রশিদটি নিয়ে বিআরটিএ অফিসে যান। টোকেন সংগ্রহ করে টোকেনের নাম্বার অনুযায়ী ভিতরে প্রবেশ করুন এবং আপনার তথ্য যাচাই করুন।
  1. তথ্য যাচাই ও বায়োমেট্রিক:
  • তথ্য ঠিক থাকলে বায়োমেট্রিক তথ্যাদি প্রদান করুন (ছবি, আঙুলের ছাপ ও স্বাক্ষর)।
  1. লাইসেন্স সংগ্রহ:
  • বায়োমেট্রিক তথ্যাদি গ্রহণের পর একটি কাগজ পাবেন যেখানে স্মার্টকার্ড লাইসেন্স দেয়ার তারিখ থাকবে। নির্ধারিত তারিখে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।

নোট: নির্ধারিত তারিখের আগেই কখনো কখনো লাইসেন্স তৈরি হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার মোবাইলে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানানো হবে।

আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স

আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

  1. স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ:
  • স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
  1. আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স ফরম:
  • আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে পূরণ করুন।
  1. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্তি:
  • ফরমের সাথে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি, ১ কপি পাসপোর্ট এবং ৪ কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি, পাসপোর্টের ১-৪ পাতার ফটোকপি যুক্ত করুন।
  1. ফরম জমা:
  • আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের অফিসে ফরম ও কাগজপত্র জমা দিন।
  1. ফি জমা:
  • ফি জমা দিয়ে একটি রশিদ গ্রহণ করুন।
  1. লাইসেন্স সংগ্রহ:
  • রশিদে উল্লেখিত তারিখে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।

এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনি সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারেন।

Leave a Comment

Leave a Comment