আপনি যদি নাম ও বয়স পরিবর্তন করে দ্বৈত ভোটার বা একাধিকবার ভোটার হয়ে থাকেন তাহলে এখনি তা বাতিল করে নিন। একাধিক ভোটার ID কার্ড বাতিল করার নিয়ম ও কি কি লাগবে তা এক নজরে দেখে নিন।
একাধিকবার বা দ্বৈত ভোটার হওয়া এবং অপ্রাপ্ত বয়সে বয়স বেশি দেখিয়ে ভোটার হওয়া আইনত অপরাধ। তাই আপনি যদি এমন করে থাকেন তাহলে নির্বাচন কমিশনে ক্ষমা প্রার্থনা করে ভোটার আইডি বাতিল করতে হবে। অন্যথায়, Fingerprint Matching এ ধরা পড়লে আপনার জেল ও জরিমানা হতে পারে।
আজকের ব্লগে আমরা আলোচনা করবো, কেন আপনার ভোটার নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং ভোটার ID কার্ড বাতিল করার নিয়ম সম্পর্কে।
আপনি যদ দ্বৈত ভোটার হয়ে থাকেন অথবা নাম বা বয়স পরিবর্তন করে একাধিকবার ভোটার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে Duplicate ভোটার ID কার্ড নিজ দায়িত্বে বাতিল করার আবেদন করতে হবে। আসুন জানি কেন ভোটার ID বা জাতীয় পরিচয় পত্র বাতিল করবেন।
আপনাকে কেন আপনার ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে হবে?
আপনি যদি অবৈধভাবে একাধিকবার এবং ভুল তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন করে থাকলে তাহলে আপনাকে ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে হবে। নিম্মোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে আপনি NID বা ভোটার ID বাতিল করতে পারেন।
১. আপনি যদি একাধিকবার বা দ্বৈত ভোটার হয়ে থাকেন
আপনি যদি ভুলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে, নাম পরিবর্তন করে ২ বার বা Duplicate ভোটার নিবন্ধন করেন,তাহলে আপনাকে যে কোন একটি নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জেলা অফিসে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে ভোটার ID কার্ড বাতিল করার আবেদন করতে হবে।
একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র ১ বার ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র করতে পারবে। যদি কেউ ২ বার ও ডুপ্লিকেট ভোটার হয়, তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
বর্তমানে Fingerprint Matching কার্যক্রম চালু রেখেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন । কারো যদি কোন Duplicate Entry সনাক্ত করতে পারে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনারা কেউ যদি এমন ২ বার ভোটার হয়েছেন বলে মনে হয়, বা হয়ে থাকেন, এখনি একটি লিখিত আবেদন করে জাতীয় পরিচয় পত্রের Duplicate Entry বাতিল করে নিন।
২. আপনি যদি কম বয়সে ভোটার হয়ে থাকেন
কম বয়সে বয়স বেশি দেখিয়ে ভোটার হওয়া একটি আইনত অপরাধ। বিভিন্ন কারণে অনেকে বয়স বেশি দেখিয়ে ভোটার নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু ভবিষ্যতে শিক্ষা সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র অনুসারে যদি বয়সের গরমিল দেখা দেয়, এবং বয়স সংশোধন করা না যায়, তাহল সে ভোটার ID কার্ড বাতিল করতে হবে।
আপনার Duplicate ভোটার ID কার্ড বাতিল করতে কি কি লাগবে?
আপনার Duplicate ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে প্রথমেই জেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর আপনাকে একটি লিখিত আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাথে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য বা ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে। ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তা হচ্ছে:
- যে ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে চান তার কপি ।
- Duplicate বা বাতিলকৃত NID Card (যদি থাকে) ।
- আসল ভোটার আইডি কার্ডের কপি (যেটি আপনি ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে চান)।
- জন্ম নিবন্ধন কপি ।
- পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি ।
- গভ:মেন্ট কর্তৃক প্রদত্ত কোনো প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট থাকলে তার কপি লাগবে।
Duplicate ভোটার ID কার্ড কিভাবে বাতিল করা যায়
আপনার Duplicate ভোটার ID কার্ড বাতিল করতে আপনাকে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
ধাপ ১: সবার আগে নির্বাচন কমিশনের জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে একটি লিখিত আইডি কার্ড বাতিলের আবেদন করতে হবে;
ধাপ ২: আবেদনের সাথে Duplicate ভোটার আইডি কার্ড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় Document সংযুক্ত করুন;
ধাপ ৩: আবেদনের সাথে রসিদ সংযুক্ত করুন আবেদন ফি পরিশোধ করার পরে ।
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করা খুব সহজ প্রক্রিয়া নয়। যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার ভোটার আইডি কার্ড বাতিল হয়ে যায়। তবে জীবিত অবস্থায় কারো ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করতে হয়।
নিচে ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার নিয়ম ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো।
ধাপ ১: লিখিত আবেদন জমা দিন
আপনাকে প্রথমে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর আপনার ভুলবশত ২য় বার ভোটার নিবন্ধন হয়েছে তাই এটি বাতিল করতে চান বলে একটি আবেদন লিখুন। আবেদনটি কম্পিউটার কম্পোজ হলে ভাল হয়।
আবেদনে আপনার Wrong বা Duplicate NID নম্বর উল্লেখ করবেন। তার পাশাপাশি সঠিক ও আসল জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর যেটি আপনি ভবিষ্যতে রাখতে চান তার নম্বরও উল্লেখ করবেন। আপনি আবেদনের সাথে কি কি কাগজপত্র জমা দিচ্ছেন তা আবেদনের নিচে সংযুক্তিতে লিখতে ভুলবেন না।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে আপনার লিখিত অনুরোধ গ্রহন করা হলে, আপনার ডুপ্লিকেট ভোটার ID বা Smart Card থাকলে সেটি ফেরত বা জমা দিয়ে দিতে হবে। এর সাথে আপনি যে ভোটার ID কার্ড ব্যবহার করছেন এবং ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে চান, এটির একটি কপিও আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
ধাপ ২: আপনার পরিচয় নিশ্চিত করুন
আপনার ভোটার ID কার্ড বাতিল করার জন্য অবশ্যই আপনার সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করতে বর্তমান NID, NID না থাকলে Birth Certificate, Academic Certificate, Passport অথবা Driving License কপি বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দিয়ে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করুন।
ধাপ ৩: আবেদন ফি জমা দিতে হবে
আপনার Duplicate ভোটার ID বা জাতীয় পরিচয় পত্র বাতিল করার জন্য যদি কোন সরকারি ফি পরিশোধ করতে হয়, যথা নিয়মে তা পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধের চালান আবেদনের সাথে যুক্ত করে দিতে হবে।
এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র বাতিল করতে যদি কোন সরকারি ফি পরিশোধ করার কোন প্রয়োজন হয়, তা যথা নিয়মে পরিশোধ করুন। আবেদনের সাথে রসিদ যুক্ত করে আবেদনটি জমা দিতে হবে।
এরপর নির্বাচন কমিশন আপনার ডুপ্লিকেট ভোটার নিবন্ধন তথ্য যাচাই করে সেটি বাতিল করে দিবে।
ভোটার ID কার্ড বাতিল করতে কত মাস সময় লাগে?
আপনার ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার আবেদন গ্রহণের সর্বোচ্চ ১ মাস থেকে ১ মাস ১৫ দিনের মধ্যে আপনার কার্ডটি বাতিল হতে পারে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার সময়সীমা ১ মাসের বেশি বা ২ মাসও হতে পারে।
তবে আপনার সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলে এবং আপনার আবেদনের কারণ বৈধ হলে ১ মাসের মধ্যেই আপনার ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে।
Duplicate ভোটার নিবন্ধনের জরিমানা কত টাকা?
ভুলবশত বা ইচ্ছাকৃত নাম পরিবর্তন করে বা বয়স পরিবর্তন করে একাধিক বার ভোটার নিবন্ধন করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরকম দ্বৈত বা Duplicate ভোটার নিবন্ধন করলে আপনার ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।